বৃহস্পতি গ্রহ, সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে ৫ম এবং আকার আয়তনের দিক দিয়ে সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ। যদিও এই গ্রহটি জ্যোতির্বিদদের কাছে প্রাচীন কাল থেকেই পরিচিত, তবুও টেলিস্কোপের আবিষ্কার আর জ্যোতির্বিদ্যার ব্যাপক উন্নতির ফলে বর্তমানে বৃহস্পতি গ্রহ সম্পর্কে আমরা আরো অনেক অজানা তথ্য জেনেছি। আর এই পুরানো পরিচিত গ্রহ বৃহস্পতি গ্রহ সম্পর্কে জানা অজানা ৫ টি তথ্য নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
বৃহস্পতি (Jupiter) গ্রহের নামকরণ করা হয় রোমান মিথোলজির দেবতাদের রাজা জুপিটার (Jupiter)এর নামে। তারা এই গ্রহের নাম জুপিটার রাখেন কারন তখনকার সময়ে এটাই ছিল তাদের কাছে আকাশের সবচেয়ে বড় কিছু। একারনে তারা একে সবচেয়ে শক্তিশালী মনে করতো। জুপিটার শুধুমাত্র দেবতাদেরই রাজা ছিলেন না, তিনি ছিলেন আকাশ এবং বজ্রধ্বনির দেবতা।
পৃথিবীর ভরের তুলনায় বৃহস্পতি গ্রহ প্রায় ৩১৮ গুণ বেশি। এটি সূর্যের ভরের মাত্র ১০৪৭ ভাগের এক ভাগ। মানে, এর ভর যদি আরেকটু বেশি হতো, তাহলে এর আভ্যন্তরীণ মহাকর্ষ হাইড্রোজেন পরমাণুগুলোকে হিলিয়ামে পরিণত করতো, আর তার সাথে উৎপাদিত হতো ফোটন বা আলো। অর্থাৎ, আরেকটু হলেই বৃহস্পতি, নক্ষত্রে পরিণত হতো। বৃহস্পতির ভর আরেকটু বেশি হলে হয়তো আমরা দ্বি-নাক্ষত্রিক সৌরজগতের বাসিন্দা হতাম।
গ্রহের বলয়ের (রিং) কথা চিন্তা করলেই আমাদের মনে শনি গ্রহের ছবি ভেসে উঠে। কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে বৃহস্পতি এবং ইউরেনাস গ্রহেরও বলয় রয়েছে। শনির মত বৃহস্পতির বলয়ও চারটি ধাপে বিভক্ত। কিন্তু এগুলোর ঘনত্ব এতই পাতলা যে যা খালি চোখে দেখা যায় না। বৃহস্পতির যে বলয় আছে, সেটা অনেকদিন আমরা জানতেও পারিনি। প্রথমবারের মত এই তথ্য পাওয়া গেছে ১৯৭৯ সালে, যখন ভয়েজার ১ মহাশূন্যযানটি সৌরজগত অতিক্রম করে আরো দূরে চলে যাওয়ার সময় যাত্রাপথে এটার পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলো।
এখনো পর্যন্ত বৃহস্পতি গ্রহে ৭টি মিশন হয়েছে (Wikipedia)। যার শুরু হয় ১৯৭৩ সালে, পাইওনিয়ার ১০ (Pioneer 10) মহাকাশযানের মাধ্যমে। জোভিয়ান সিস্টেমে এটিই প্রথম কোন মহাকাশযান। এরপর ১৯৭৪ সালে যায় পাইওনিয়ার ১১ (Pioneer 11)। এরপর ১৯৭৯ সালে ভয়েজার ১ (Voyager 1) এবং ভয়েজার ২ (Voyager 2) কে বৃহস্পতি মিশনে পাঠানো হয়। বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ থেকে ডাটা পাচ্ছে। এরপর ১৯৯২ সালে উলিলেস মিশন, ২০০০ সালে ক্যাসিনি-হাইগেন্স মিশন এবং ২০০৭ সালে নিউ হরাইজন মিশন সংগঠিত হয়। এছাড়া ১৯৯৫ সালে গ্যালিলিও মিশন এবং ২০১৬ সালে জুনো মিশন নামে বৃহস্পতি গ্রহে আরো ২টি মিশন হয়।
ভাবতেই কেমন জেনে লেগে ওঠে, তাই না? ৬৭ টি উপগ্রহ! তবে এদের মধ্যে চারটি প্রধান উপগ্রহ আছে। এদের নাম হলো ইও (Io), ক্যালিস্টো (Callisto), ইউরোপা (Europa), এবং গ্যানিমিড (Ganymede)। এদেরকে গ্যালিলীয় উপগ্রহ বলা হয়, কারণ এদেরকে প্রথমবার দেখেছিলেন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি। ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দে তিনি তাঁর টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন বৃহস্পতির চারদিকে এরা ঘুরছে। তিনি এদের নামকরণ করেন “Medicean stars”। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা তাঁর নামানুসারে এদের একত্রে নাম দেন “Galilean satellites”। এই ৪টি উপগ্রহ সৌরজগতের বামন গ্রহদের থেকেও বড়। অবাক হবেন যে, আমাদের এই সৌরজগতে, পৃথিবী ছাড়া আর যে যেখানে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা আছে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, তার মধ্যে অন্যতম প্রার্থী হচ্ছে ইউরোপা (Europa)।
No responses to বৃহস্পতি গ্রহ সম্পর্কে অজানা ৫টি তথ্য।😱জেনে নিন এক্ষুনি।
Be first Make a comment.